ভারতে মুসলিম ব্যক্তিগত আইন আলোচনা করো
উত্তর: মুসলিম বিবাহ আইন: মুসলিম বিবাহ ইসলামিক আইন অর্থাৎ
শরিয়ত মেনেই সব মুসলিমদের বিয়ে হয়। মুসলিম বিবাহকে একটি চুক্তি হিসেবে করা হয়। এক পক্ষ (স্বামী) বিবাহের প্রস্তাব করবেন এবং অন্য পক্ষ (স্ত্রী) সেই প্রস্তাব গ্রহন করবেন বা রাজী হবেন সাক্ষী রেখে। একেই বলে নিকা। বিবাহের যে লিখিত চুক্তি পত্র তৈরী করা হয় তাকে বলা হয় নিকানামা।
মুসলিম বিবাহ যেহেতু একটা চুক্তি তাই চুক্তির মূল্য স্বরূপ স্বামী স্ত্রীকে কিছু অর্থ বা অন্য সম্পত্তি দিতে বাধ্য পরবর্তী সময়ে সেই স্ত্রীর আর্থিক সুরক্ষার জন্য। স্ত্রীকে দেওয়া সম্পত্তি এবং অর্থকে (মহর) মূল্য বলে ধরা হয়। সহবাসের জন্য এই মূল্য। বিবাহ বিচ্ছেদ হলে এই মহরের অর্থ অবশ্যই স্বামী স্ত্রীকে দেবেন এবং সেই অর্থ থেকে স্ত্রী তার ভরনপোষণ চালাবেন এবং এই মহরের অর্থ ফেরৎ না দিলে স্ত্রী স্বামীর বিরুদ্ধে মামলা করতে পারবেন।
ইসলামিক আইনে একটি মুসলমান মহিলা তার স্বামী গৃহে বসবাস করার অধিকারী, যতদিন না তার স্বামী তাকে তালাক দিচ্ছেন। তালাক দেওয়া স্ত্রীকে পুনরায় বিয়ে করা যায় না। তবে সেই স্ত্রীকে যদি অন্য পুরুষ বিয়ে করে সহবাস করে এবং তালাক দেয় তবেই পূর্বের স্বামী তার স্ত্রীকে পুনরায় বিয়ে করতে পারে।
মুসলিম বিবাহ বাতিল আইন:
এই আইন অনুযায়ী মুসলিম মহিলার আবেদন ক্রমে মুসলিম আইন মোতাবেক তার বিবাহ বিচ্ছেদের জারী করে তার বিবাহ বাতিল করা যায়। যে সব কারণে এই বিবাহ বাতিল করা যায় সে গুলি হল- নিষ্ঠুরতা, যেমন কোনো স্বামী যদি তার স্ত্রীর উপর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করে অথবা কোনো অসামাজিক কাজকর্মে লিপ্ত থাকে অথবা স্বামী যদি স্ত্রীর সম্পত্তি বিক্রি করে দেয় বা স্ত্রীর সম্পত্তির ক্ষেত্রে আইন গত অধিকার প্রয়োগে বাধা সৃষ্টি করে বা স্বামীর যদি একের অধিক স্ত্রী থাকে এবং সবাইকে সমান অধিকার, স্নেহ, ভালোবাসা না দেয় অথবা বিপথে যেতে স্ত্রীকে বাধ্য করে।
বিবাহ বিচ্ছেদের অন্যান্য কারন গুলি হলযদি চার বছর যাবৎ কোনো স্ত্রী তার স্বামীর খোঁজখবর না পায়, অথবা যদি স্বামী দুই বছর তার স্ত্রীর ভরনপোষণ দিতে অসমর্থ হয়, স্বামী সাত বছর বা তারও বেশি সময়ের জন্য কারাদণ্ডে দণ্ডিত হলে, স্বামী যদি তিন বছর পর্যন্ত কোনো যুক্তিসঙ্গত কারণ ছাড়া তাঁর দাম্পত্য কর্তব্য পালন না করে থাকেন, যদি স্বামী পুরুষত্বহীন হন, যদি স্বামী দুই বছর যাবৎ উন্মাদ রোগগ্রস্ত হন অথবা স্বামী যদি কুষ্ঠরোগে অথবা অত্যন্ত ক্ষতিকর যৌনরোগে ভোগেন। বিবাহ বিচ্ছেদ সংক্রান্ত মামলা শোনার ও নিষ্পত্তি করার এক্তিয়ার পারিবারিক আদালতের।
ইসলামিক ভরনপোষন আইন:
স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে যতদিন বৈবাহিক সম্পর্ক অটুট থাকবে ততদিন স্বামী-স্ত্রীর ভরণপোষণ চালাবেন। কিন্তু স্ত্রী তখনই ভরন পোষন পাবেন যখন তিনি সাবালকত্ব প্রাপ্ত হয়ে স্বামীর প্রতি তার কর্তব্য পালন করবেন। যথা স্বামীকে সহবাসের সুযোগ দেবেন, স্বামীর গৃহে বাস করবেন এবং স্বামীর আদেশ মেনে চলবেন। যদি এই সব শর্তের কোনো একটি ভঙ্গ হয় স্বামী তার স্ত্রীর ভরণপোষণ বন্ধ করে দিতে পারেন। কোনো বিবাহ বিচ্ছিন্ন মহিলা যদি নিজের ভরণ পোষনে সক্ষম হন তাহলে বিবাহ বিচ্ছেদ অথবা তালাকের পর তিন মাস পর্যন্ত স্বামীর কাছ থেকে ভরণ পোষণ পারে। কিন্তু যদি দেখা যায় কোনো স্ত্রী তার ভরনপোষনে অক্ষম তাহলে তিন মাসের পরেও সেই স্ত্রী তার স্বামীর কাছ থেকে খরপোষ পাবার অধিকারী হবেন।
এমন কি নিকার সময় স্ত্রীকে দেওয়া অর্থ (মহর) তালাক বা বিবাহ বিচ্ছেদের পর স্বামী সেই মহরের অর্থ তার স্ত্রীকে দেবেন এবং সেই অর্থ দিয়ে স্ত্রী তার ভরনপোষন চালাবেন। সন্তানের বেলায় প্রাপ্ত বয়স্ক না হওয়া পর্যন্ত মুসলিম পিতামাত তাদের ভরণপোষণ দেবেন। মুসলিম নারীদের ভরনপোষণের ক্ষেত্রে ভারতীয় ফৌজদারী কার্যবিধি ১২৫ নং ধারা প্রয়োজ্য। স্বামীর কাছে ভরনপোষন চেয়ে তারা পারিবারিক আদালতে মামলা দায়ের করতে পারেন।