ভাজা লবণের ভিন্ন ব্যবহারবিধি 2025
কোনো কোনো আয়ুর্বেদিকের মতে এইভাবে চাটুতে বা লোহার কড়াইয়ে বাদামী করে ভাজা সাদা লবণ ছোটদের / চামচ এবং বড়দের । চামচ এক গ্লাস জলে দিয়ে ফুটিয়ে নিন। লবণ যখন জলে ভালো করে গুলে যাবে তখন নামিয়ে অল্প অল্প গরম থাকতে রোগীকে খেতে দিন। রোগীর যখন জ্বর থাকবে না তখন এই লবণ জল খেতে দেবেন। এর ফলে দেখা গেছে প্রায় 90% রোগীর জ্বর পরে আর আসে না। আর যদি জ্বর আসেও তাহলে এভাবেই লবণ জল দেবেন। পরে অর্থাৎ তৃতীয় বার আর জ্বর আসবে না। তবে রোগীকে ঠান্ডা থেকে সাবধানে রাখার পরামর্শ দেবেন।
বিদেশেও কেউ কেউ এভাবে ভাজা লবণের ব্যবহার করে উপকার পেয়েছেন।
পথ্যাদি: জ্বরের সময়ে বা শুরুতে আগেই বলেছি ভাত জাতীয় শক্ত বা ভারি খাবার না দেওয়াই ভালো। তরল খাদ্য এবং ফল দেওয়া যেতে পারে। যেমন দুধ, চা, মুসম্বীর রস (বরফ না দিয়ে) ডাবের জল, লেবুর জল, সফেদা, পেঁপে, আলু বোখরা, ইত্যাদি দেওয়া যায়। আয়ুর্বেদানুসারে রোগীকে আটা বা ময়দার কোনো খাবর রুটি পরোটা, বিস্কুট, পাউরুটি ইত্যাদি জ্বরের সময় না দেওয়াই ভালো। মুগের ডালের জল, সাগুদানা কিংবা ভাজা গমের আটার ঘোল, রুচি অনুসারে আধ কাপ মাত্রায় দেওয়া যেতে পারে।
গমের আটা খুব সামান্য পরিমাণ ঘি দিয়ে ভেজে তাতে জল দিয়ে পাতলা করে ভালোভাবে নাড়তে হবে। যাতে গোটা না হয়ে যায় এবং ঘন হয়ে ভাতের মাড়ের মতো হয়ে যায়। পরে নামাবার আগে সামান্য পরিমাণ দুধ, চিনি বা শুধু চিনি বা শুধু লবণ মিশিয়ে নিতে হবে। গমের এই বার্লি বা পটোলিয়া জ্বরে খুব উপাদেয় পানীয়।
সহজ পারিবারিক আয়ুর্বেদিক চিকিৎসা
জ্বর একেবারে কমে যাওয়ার পর আস্তে আস্তে শক্ত খাবার দেওয়া শুরু করবেন।
যেমন- দু’একটা আটার রুটি, ভেন্ডি, পটল, সবুচালের নরম ভাত, মেথি বা বেথোর শাক, মুগ মুসুরের ডাল, টম্যাটো ইত্যাদি। তবে কোনো খাবারই জ্বরের রোগী যেন পেট ভরে না খায়। বরং অল্প অল্প করে বারে বারে খেতে দিন।
আগের দিন রাতে 8-10 টি পুদিনা পাতা, 8-10 টি মনাক্কা জলে ভিজিয়ে পরদিন ঐ জল ছেঁকে খেলে উপকার পাওয়া যায়। উদর বিকার বদহজম মন্দাগ্নি ইত্যাদিতে ফলপ্রদ।
খিদে না থাকলে খাওয়ার কিছু আগে লবণ মিশিয়ে আদা কুচি অথবা গোলমরিচের গুঁড়ো, বিট লবণ মিশিয়ে টম্যাটোর কুটি খেলে লাভ হয়। কিংবা 4-১টি মনাক্কার (বীজ বের করে নিয়ে) টুকরো ছেঁচে বা পিষে সামান্য বিট লবণ মিশিয়ে খাওয়ালেও উপকার পাওয়া যায়।
জ্বরের পরে বা জ্বর থেকে উঠে শরীর দুর্বল থাকে। এ সময়ে দুধের মধ্যে খেজুর (4-5) দিয়ে ফুটিয়ে খেলে বা 1-2 চামচ মধু দিয়ে দিনে 2-3 বার খেলে শরীরে বল বৃদ্ধি হয়।
এছাড়া, জ্বর পুরোপুরি ছাড়া পর্যন্ত পূর্ণ বিশ্রাম, শীতল খাবার, ঠান্ডা হাওয়া থেকে দূরে রাখা, মাথায় জলপট্টি (103° এর উপর জ্বর থাকলে) দেওয়া, স্পঞ্জ করিয়ে দেওয়া, ঘন ঘন পিপাসা পেলে মৌরি ভেজানো জল অল্প অল্প করে সেবন ইত্যাদি প্রয়োজন। অনেকের দুধ এ সময়ে হজম হয় না। তেমন হলে দুধ গরম করার সময় কয়েক দানা মৌরি তাতে দিলে বা 1-2টি ছোট পিপল দিয়ে ফুটিয়ে নিলে হজমের সহায়ক হয়। ঠোঁট ফাটলে বা ঘন ঘন শুকালে খুব মিহি করে জিরা বেটে 4 ঘন্টা অন্তর ঠোঁটে লেপন করলে উপকার পাওয়া যায়।
সুস্থ হয়ে ওঠার পর আহারাদিঃ জ্বর থেকে ওঠার পর রোগীর খিদে বাড়তে থাকে। এ সময়ে আস্তে আস্তে পুষ্টিকর খাবার দেওয়া শুরু করতে হয়। তবে যেহেতু পাচনতন্ত্র দুর্বল থাকে তাই অল্প মাত্রায় ধীরে ধীরে খাবার বাড়াতে হয়। যবের দালিয়া কমলা, মুসম্বি জাতীয় ফলের রস, লেবু দেওয়া আখের রস ইত্যাদি খাওয়ালে রোগী খুব দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠতে থাকে। হজম শক্তিও ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে। রোগী কিছুটা সুস্থ হয়ে উঠলে শক্ত খাবার দেবেন। শক্ত খাবার দেবার সময় বেশি করে সবজি দেবেন। তবে সবজি সেদ্ধ করে নিলে ভালো হয়। সব রকম সবজি মিলিয়ে সেদ্ধ করে সুপ দেওয়া যেতে পারে। এছাড়া পাতলা-পাতলা গমের রুটি, আপেল ইত্যাদিও দেবেন।
গোড়ার দিকে তেলে ভাজা খাবার, মশলা দেওয়া খাবার, মিষ্টি, চা, কফি, অ্যালকোহল বা অ্যালকোহল জাতীয় পানীয় ইত্যাদি যথাসম্ভব বর্জন করে চলা উচিত। এগুলো থেকে যত সাবধানে থাকবে, ততই রোগীর রোগ প্রতিরোধক ক্ষমতা বাড়বে। বার বার জ্বর আসা বন্ধ হবে।
যে-কোনো ধরনের জ্বরে কার্যকরী যোগ
1. সুঠ, 2. ছোট পিপল, 3. গোলমরিচ, 4. সৌন্ধব লবণ, 5. অজমোদ,
6. শুকনো পুদিনা, 7. পিত্ত পাপড়া, ৪. নিম।
প্রতিটি 6 গ্রাম করে নিয়ে পরিষ্কার করে আলাদা আলাদাভাবে প্রত্যেকটিকে চূর্ণ করে নিন। জ্বরের সময়ে (101 ডিগ্রীর বেশি) প্রত্যেকটি সম মাত্রায় নিয়ে সেবন করাবেন। জ্বর কম থাকলে বা 101 ডিগ্রী পর্যন্ত হলে নিমের মাত্রা একটু ২/, ভাগ) কমিয়ে দেবেন।
কিভাবে সেবন করাবেন: উপরিউক্ত চূর্ণ বড়দের জন্য 6 গ্রাম (ছোটজের জন্য
3 গ্রাম) নিয়ে 60 গ্রাম পরিমাণ জলে ভালো করে বেটে নিন, তারপর এমন তরল বা ঘোল করে নিন যাতে খুব গাঢ় না হয়, পাতলাও না হয়। মনে রাখবেন, এই ওষুধ যত বাটবেন, যত ঘুঁটবেন ততই এর গুণ এবং ক্ষমতা বাড়বে। এই ওষুধ একটা কাঁসার পাত্র গরম করে তার মধ্যে দিন যাতে ওষুধ কিছুটা গরম হয়ে যায়।
এভাবে রোগীকে প্রতিদিন সকালে খালি পেটে এক ঢোঁকে খেতে দিন। ছোটোদের খাওয়ার পর একটু জল দিয়ে দেবেন। প্রয়োজনে ঐ ঘোলের মধ্যে সামান্য লবণও দিতে পারেন। এভাবে খালি পেটে 3-4 দিন খেলে যে কোনো জ্বর এমন কি এক বছরের পুরনো জ্বরও ভালো হয়ে যায়।
এই ওষুধ সেবনকালে পথ্যের দিকে নজর দেবেন। হালকা সুপাচ্য খাবারই দেবেন। এ সময়ে কাচরী না খাওয়ার পরামর্শ দেবেন।